Thursday, July 27, 2017

পৃথক লেনে পর্যাপ্ত বাস চাই

 পৃথক লেনে বিআরটিসির পর্যাপ্ত বাস শীর্ষক আলোচনা সভা


ঢাকার যানজট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বিগত কয়েক বছরে ফ্লাইওভার, ওভার পাসসহ নানা বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রাইভেট গাড়ী বান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গণপরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি না করে প্রাইভেট গাড়ী বান্ধব অবকাঠামো ও বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে যানজট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রতি অবহেলার প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষ দুভোর্গের শিকার হচ্ছে।

নব্বই দশকে ঢাকার পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার, ২০০৮ সালে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। নানা সমস্যার কারণে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারে ।

রাজধানীতে দিনে অন্তত ৬ লাখ মানুষ নানা প্রয়োজনে আসছেন এই শহরে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। তাই দিনে অন্তত ২১ লাখ পরিবহন ট্রিপের প্রয়োজন। কিন্তু যানজটে ২১ লাখের তিনভাগের একভাগ ট্রিপও হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীর প্রতি ৩ হাজার যাত্রী যাতায়াতের জন্য বাস ও মিনিবাস আছে মাত্র ১টি। তাছাড়া অটোরিক্সাগুলোর এক-তৃতীয়াংশ অচল। গণপরিবহনের সঙ্কটের বিপরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় প্রতিদিন নামছে ৩১৭ টি প্রাইভেট কার।

জাইকা’র তিনটি রুটে পরিচালিক এক গবেষণায় দেখা যায়,  ঢাকায় পাবলিক বাসে প্রতিদিন প্রায় ১৯লক্ষ যাত্রী চলাচল করে। এছাড়া গবেষণায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার তিনটি করিডোরে পাবলিক বাসে যাতায়াতের জন্য গড়ে ৭৭ মিনিট করে সময় লাগে। যার ২৪% বাসের জন্য অপেক্ষা, ৪৪% বাসে ওঠা-নামা এবং বাস পরিবর্তন এবং ৩২% সময় বাসে চলন্ত অবস্থায় ব্যয় হয়।

ঢাকা মহানগরীতে যানজট হ্রাসে গণপরিবহণের দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে অপেক্ষার সময়, বাসে ওঠানামা ও বাস পরিবর্তনের সুবিধা সৃষ্টি পাশাপাশি বাসের জন্য পৃথক লেন করা গেলে বাসে যাতায়াতের সময় অনেক কমে আসবে। যা মানুষকে বাস ব্যবহারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বাসের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

পাবলিক বাস সার্ভিসের বর্তমান অবস্থা:
* ঢাকার বর্তমান পাবলিক বাস পরিচালনা ব্যবস্থা পরিকল্পিত নয় এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
* বাস কোম্পানী কর্তৃক সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
* সঠিকভাবে বাস রুট ডিজাইন ও বরাদ্দ দেয়া হয় নি।
* বাস স্টপেজের সঙ্গে বাসা ও অফিসের মধ্যবর্তী যাতায়াতের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই।
* বাস স্টপেজের নির্দ্দিষ্টতা নেই এবং যাত্রী ছাউনী না থাকা রোদ বৃষ্টিতে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
* রেলওয়ে স্টেশন, নৌ-টার্মিনাল ও দূরপাল্লার বাস টার্মিনালের সঙ্গে সিটি বাসের সমন্বয় নেই।
* নারী, শিশু, বুদ্ধ, প্রতিবন্ধিসহ সকলের বাসে ওঠা-নামার সুবিধা নেই। এমনকি অনেক সময় চলন্ত অবস্থায় যাত্রী নামানোর কারণে যে কারো পক্ষে কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং যে কোন সময় দর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান সম্ভব হয়নি বিধায় পাবলিক বাসের সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া যায়নি।



গণপরিবহন ব্যবস্থা স্বপ্ন ও সম্ভাবনা
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, রাজধানীর মানুষের যাতায়াত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে চার হাজার পাবলিক বাস চালু করার আশ^াস দিয়েছেন । রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি প্রায় ৪০০ বাস কেনার প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান সড়কে প্রাইভেট গাড়ীর জটের কারণে এ সকল অতিরিক্ত পরিবহনও জনগণকে কাঙ্গিত সুবিধা দিতে পারবে না। তাই এখনই ঢাকা পাবলিক পরিবহন চালনের জন্য পৃথক লেন তৈরির পরিকল্পনা প্রয়োজন।

ঢাকা নগরে বিআরটিসি-র পরিকল্পিত ও সুবিধাজনক স্থানে নিজস্ব ডিপো এবং তুলনামূলক মানসম্মত বাস থাকায় বিদ্যমান যানজট নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে কতিপয় রাস্তায় পৃথক লেনে বিআরটিসি বাস চালানোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করছি।

আমাদের সুপারিশ সমূহ

যাত্রীর যাতায়াত সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার সম্ভব হলে গণপরিবহনের ব্যবস্থাপনা সহজতর হবে। বর্তমানে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সী বিশ্লেষণ করে বা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রীদের যাতায়াতের চাহিদা নিরুপন করা সম্ভব।

১) যাত্রীর চাহিদা নিরুপন
      ক)  মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ঢাকার জনগনের নিকট হতে তাদের প্রতিদিনের যাতায়াত স্থানের তথ্য সংগ্রহ;
      খ)  মোবাইল ফ্রিকুয়েন্সী বিশ্লেষনের মাধ্যমে উপরের সংগৃহীত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা;
      গ)  রেল, বাস, নৌ-পথের সাথে সমন্বয় রেখে বিআরটিসি-র বাস পরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ;

২) বাসের জন্য পৃথক লেন
ক) ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে প্রাথমিকভাবে স্থানান্তর যোগ্য ডিভাইডার দিয়ে বাসের জন্য পৃথক লেন তৈরি;
খ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পৃথক লেনে অন্য যানবাহন প্রবেশ না করতে নির্দেশনা প্রদান;
গ) মন্ত্রী, বিচারপতি, এমপি, সচিব পর্দমর্যাদার ব্যক্তিরা শুধুমাত্র এই লেন ব্যবহার করার সুবিধা প্রধান;

৩)   বাস ব্যবস্থাপনা
  ক) মোবাইল অ্যাপস এর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাত্রীর চাহিদা অনুসারে ঢাকার বিভিন্ন রুটে বিআরটিসি বাস প্রদান;
  খ) পৃথক লেনে শুধুমাত্র বিআরটিসি বাস চলাচল করতে পারবে;
  গ) বাসগুলোর চালাচল জিপিআরএস এর মাধ্যমে নজরদাড়িতে রাখা;
 ঘ) কোন স্বার্থানেষী গোষ্ঠী বিআরটিসি-র বাস চালাচল যাতে  ব্যহত না হয়, তার জন্য গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা করা;

৪)  পৃথক লেনে বাসের সুবিধা
১) পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে;
২) যানজট নিয়ন্ত্রণ হবে;
৩) প্রাইভেট গাড়ীর ব্যবহার হ্রাস পাবে;
৪) পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে;
৫)পরিবহনখাতে সামাজিক সমতা নিশ্চিত হবে;

পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা (বাস, ট্রেন ইত্যাদি) যা রাস্তায় কম জায়গা দখল করে অধিক যাত্রী বহন করতে পারে এবং একই সাথে অধিক দূরত্বের যাতায়াতকে সাচ্ছন্দ্য করবে। আমরা প্রত্যাশা করি ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে ঢাকার যানজট কমে আসবে,  প্রাইভেট গাড়ীর ব্যবহার হ্রাস পাবে, পরিবেশের আরো উন্নত হবে।

Saturday, July 15, 2017

মশা তাড়াতে বাসায় প্রাকৃতিক উপায়



মশা নিয়ে সবাই চিন্তিত। মশা তাড়ানোর দায়িত্ব নাগরিকের !!! তাই ভাবলাব কিছু প্রাকৃতিক উপায় খুজে দেখি। ইন্টারনেটে গেটে কিছু তথ্য পেলাম পরীক্ষা করা হয়নি, নিজ দায়িত্ব প্রয়োগ করবেন!!!
নিম তেল
নিম তেল আর নারকেল তেল সম পরিমাণে মিশিয়ে শরীরের খোলা অংশে মেখে নিন। এবার সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঘুমিয়ে পড়ুন।কারণ শরীর থেকে যে গন্ধ বের হয় তা মশা দূরে রাখতে দারুন কার্যকর।অন্তত আট ঘণ্টা আপনার কাছে মশাকে ভিড়তে দিবে না।

ইউক্যালিপটাস-লেবু তেল
ইউক্যালিপটাস আর লেবু তেলে একধরনের উপাদান পাওয়া যায় যার নাম ‘cineole’। সম পরিমাণে ইউক্যালিপটাস আর লেবু তেল ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার গায়ে মেখে নিলে যে যেকোনো পোকামাকড় আপনার থেকে দূরে থাকবে।সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়াতে এই উপকরণের জুড়ি নেই।

রসুন
মশা তাড়ানোর অন্যতম উপাদান হচ্ছে রসুন। রসুনের শক্তিশালী এবং তীব্র কটু গন্ধই মশার কামড় থেকে বাঁচতে এবং ঘরকে মশা মুক্ত করতে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা রাখে। কিছু রসুনের কোষ নিয়ে তা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি পুরো ঘরে স্প্রে করে দিতে হবে। মশা থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিজের শরীরেও এই পানি স্প্রে করা যেতে পারে।

লেবুর তেল
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (CDC) দ্বারা স্বীকৃত লেবু এবং ইউক্যালিপটাস তেলের মিশ্রন প্রাকৃতিক ভাবে মশাকে দূরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। লেবুর তেল এবং ইউক্যালিপটাস তেলের মধ্যে cineole নামক একটি কার্যকরী উপাদান রয়েছে যা ত্বকে অ্যান্টিসেপ্টিক এবং ইনসেক্ট রিপিলেন্ট হিসেবে কাজ করে। সমান অনুপাতের ইউক্যালিপটাস তেল এবং লেবুর তেলের মিশ্রন গায়ে লাগিয়ে রাখলে মশা দূরে থাকবে।

পুদিনা
বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষনায় দেখা গেছে, যে পুদিনার তেল এবং পুদিনার নিষ্কর্ষ ইনসেক্ট রিপিলেন্ট হিসাবে ভালো কাজ করে। পুদিনা পাতাকে বাষ্পায়িত করে পুরো ঘরে বাষ্প ছড়িয়ে এবং পুদিনার তেল শরীরে মেখে মশা থেকে বাঁচা যায়। পুদিনা গাছ জানালার পাশে লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া পুদিনা ফ্লেভারসমৃদ্ধ মাউথ ওয়াশ পানির সাথে মিশিয়ে ঘরের চারিদিকে স্প্রে করলে মশা দূরে থাকবে।

তুলসি
প্যারাসাইটোলোজি রিসার্চ জার্নালের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, মশার শুককীট মারতে এবং মশাকে দূরে রাখতে তীব্র ভাবে কাজ করে তুলসী। ঘরের বারান্দায় অথবা জানালার পাশে তুলসী গাছ লাগিয়ে নিলে মশা থেকে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। এই গাছের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যার জন্য মশা ঘরের ভিতর আসবে না।

চা গাছের তেল
ত্বক ও চুলের জন্যও চা গাছের তেলের যথেষ্ট পরিমাণ ভালো দিক রয়েছে। তাছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান। চা গাছের তেল মশাকে দূরে রাখার ক্ষেত্রেও অসাধারন কাজ করে। এর তীব্র গন্ধ, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য মশা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। চা গাছের তেল শরীরে মেখে অথবা এর কিছু ড্রপ বাষ্পায়িত হিসাবে ব্যবহার করলে বাতাসের মধ্যে চা গাছের তেলের গন্ধ বিরাজ করবে এবং মশাকে দূরে রাখবে।

নিমের তেল
মানব দেহের জন্য নিমের অনেক গুলো ভালো দিক রয়েছে। মশা বিতাড়ক হিসাবেও নিমের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। অ্যামেরিকান মসকিউটো কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের(১) একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যে, নারিকেল তেলের সাথে নিমের তেলের ১:১ অনুপাতের মিশ্রণ মশা তাড়ানোর একটি কার্যকরী উপায়। নিমের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-প্রটোজোয়াল যা চামড়ায় এক ধরনের মশা বিতাড়ক গন্ধ সৃষ্টি করে। সমান পরিমানের নিমের তেল এবং নারিকেল তেলের মিশ্রন দেহের বহিরাংশে লাগালে মশার কামড় থেকে আট ঘন্টা সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

কর্পূর 
মশা তাড়াবার আরেকটি উপায় হলো কর্পূর। কর্পূরের ব্যবহার মশা বিতাড়ক হিসাবে চমৎকার কাজ করে। অন্যান্য প্রাকৃতিক সমাধানের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কার্যকরী উপাদান হচ্ছে কর্পূর। খুবই অল্প পরিমাণ কর্পূর ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিয়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হবে ১৫-২০ মিনিট, তাহলে পুরো ঘর মশা মুক্ত হয়ে যাবে।

মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক মশা নিধন পন্য ব্যবহার করে মশা তাড়ানোর চেষ্টা না করে উপরের পদ্ধতিগুলো মানা খুবই স্বাস্থ্যকর এবং এগুলো আমাদের হাতের কাছেই থাকে।

লেমন থাইম: বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, লেমন থাইমের পাতা গুঁড়া করে ঘরে রাখলে মশার উপদ্রব ৬২ ভাগ পর্যন্ত কমানো যায়।
ল্যাভেন্ডার: শুধু মশা তাড়ানোর জন্য নয়, ল্যাভেন্ডারের রয়েছে আরও প্রচুর গুণ। উত্কণ্ঠা, ব্যথা উপশম, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাতেও দারুণ উপকারী ল্যাভেন্ডার।
লেমন বাম: লেবু পাতার সুগন্ধ যেমন মশা তাড়াতে সাহায্য করে, তেমনই এই গাছের পাতা দিয়ে তৈরি হার্বাল চা হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যাতেও উপকারী। তাই বাসার বারান্দায় বা ঘরে লাগাতে পারেন।
তুলসি: নতুন করে তুলসির গুণের কথা বলার প্রয়োজন নেই। তুলসি মশা তাড়াতে সাহায্য করে।

লেমন গ্রাস: এক জাতীয় ঘাস। এই ঘাসের মধ্যে থাকে ন্যাচারাল অয়েল সিনট্রোনেলা, যা মশা তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। বাসায় লেমন গ্রাস লাগালে তাই রেহাই পেতে পারেন মশার হাত থেকে।
ক্যাটনিপ: এই পুদিনা জাতীয় গাছকে বলা হয় মশার যম। যে কোনও মসকিউটো রিপেলেন্টের থেকে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী ক্যাটনিপ।

রোজমেরি: বাসায় যদি রোজমেরি গাছ লাগান তাহলে মশার হাত থেকে রেহাই তো পাবেনই, সঙ্গে জুটবে আরও অনেক উপরি পাওনা। সুগন্ধী রোজমেরি শুঁকলে স্মৃতিশক্তি ও মনোসংযোগ বাড়ে। ঔষধী গুণও রয়েছে রোজমেরির। ব্যবহার করতে পারেন রান্নাতেও।

রসুন: রান্নায় স্বাদ বাড়ায়, ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে, রসুনের এই গুণগুলো তো জানতেন। কিন্তু জানতেন কি বাড়িতে রসুন গাছ লাগালে মশার উপদ্রবে থেকেও রেহাই পাওয়া যায়?

গাঁদা: এই ফুল লাগালে শুধু যে দেখতে সুন্দর লাগে তাই নয়, পোকামাকড়ও থাকে শতহাত দূরে। গাঁদা গাছে থাকা পাইরেথ্রামের গন্ধ পোক-মাকড়, মশা সহ্য করতে পারে না। বাগানের চারপাশ জুড়ে লাগাতে পারেন গাঁদা গাছ। শোভাও বাড়বে, মশাও হবে না বাড়িতে।
Source: 
http://www.newsbangladesh.com/details/54374
http://bonikbarta.net/bangla/news/2017-03-08/109249/%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%9B-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87--%E0%A6%AE%E0%A6%B6%E0%A6%BE!/
https://amarhealthbd.wordpress.com/2015/05/05/%E0%A6%AE%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF/
http://amradhaka.com/solution/%E0%A6%AE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%9C-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A7%87.html

Friday, February 10, 2017

ঢাকার ফুটপাথ এবং একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

ঢাকার ফুটপাথগুলো কি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উপযোগী। 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুসারে : 

‘‘প্রবেশগম্যতা’’ অর্থ ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য সকল সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যান্যদের মত প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমসুযোগ ও সমআচরণ প্রাপ্তির অধিকার;

গণস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতা নিশিচতকরণ
৩৪। (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, গণস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকল্পে Building Construction Act, 1952 (East Bengal Act II of 1953) ও তদধীন প্রণীত বিধি-বিধান অনুসরণ করিতে হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সর্বসাধারণ গমন করে এইরূপ বিদ্যমান সকল গণস্থাপনা, এই আইন কার্যকর হইবার পর, যথাশীঘ্র ও যতদূর সম্ভব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আরোহন, চলাচল ও ব্যবহার উপযোগী করিতে হইবে।

[ব্যাখ্যা: এই ধারায় ’গণস্থাপনা’ বলিতে সর্বসাধারণ গমন বা চলাচল করে এমন সকল সরকারি ও বেসরকারি ইমারত বা ভবন, পার্ক, স্টেশন, বন্দর, টার্মিনাল ও সড়ককে বুঝাইবে।]

Thursday, October 20, 2016

জনস্বাস্থ্যকে প্রধান্য দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি

জনস্বাস্থ্যকে প্রধান্য দিয়ে
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন বিভাগ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে,  জনগনের স্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারের এ ধরনের পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। তবে এ  পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আলোচনা শুধুমাত্র জনসেবক ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সরকারে চিকিৎসা কেন্দ্রিক, বর্তমানে মানুষের স্বাস্থ্য ও রোগের প্রকৃতি বিবেচনা করে সরকারকে জনস্বাস্থ্য বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। আর এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি জনস্বাস্থ্য বিভাগ গঠন করা।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অনেকাংশে সফল হয়েছে, যা বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ (হৃদরোগ, ষ্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) বেড়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৬০% হয় অসংক্রামক রোগে। আমাদের আজকের আলোচনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের রোগ আর মৃত্যু অবস্থা, সরকারী-বেসরকারী চিকিৎসা সেবার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আগামী বছরের বাজেট এবং স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে মূল্যায়ণ করার চেষ্টা করবো।

বাড়ছে অসংক্রামক রোগ,

২০১০ সালে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৯৮.৭% এর মধ্যে অন্তত একটি অসংক্রামক রোগের (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) ঝুঁকি (ৎরংশ ভধপঃড়ৎ), ৭৭.৪% এর মধ্যে অন্তত দুটি ঝুঁকি এবং ২৮.৩% এর মধ্যে অন্তত তিনটি ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশে  প্রায় ১২ লক্ষ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর ২ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ১.৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। জাপানিজ জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি (জেজেসিও)-র তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষের দেহে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে চলেছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যা নিওপ্লাসিয়া নামে পরিচিত। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকবে ২ কোটি ১৪ লাখ মানুষ।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ২০১৫ সালের গবেষণা অনুসারে বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত  রোগীর সংখ্যা ৭১ লাখ। এর মধ্যে মোট পাঁচ শতাংশ শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে পাঁচ শতাংশ হলো টাইপ টু ডায়াবেটিস, প্রধানতই শিশুরাই এর শিকার। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে ৩,৮২০০০ মানুষ পঙ্গু হয় এবং ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। বর্তমানে দেশে ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেয়া যায় মাত্র কয়েক হাজার রোগীকে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে। ২০০৯ সালে জাতীয় এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ জন চিকিৎসা নেয়। ২০১৪ সালে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৩৩ জনে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানচেটে বলা হয়- ২০১৩ সালে ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে এবং ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ হার্ট অ্যাটাকে ও ২৮ হাজার মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগে মারা যান। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণের একটি হৃদরোগ।

বাংলাদেশ প্রায় সোয়া দুই কোটিরও বেশি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। ২০১১ সালে মানসিক রোগীর সংখ্যা ছিল দেড় কোটি।  আরেকটি গবেষণার তথ্য, ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মানসিক রোগীর সংখ্যা ১৮%। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র সমীক্ষায় দেখা যায় ৭-১৫ বছরের বয়সী শিশু-কিশোরদের ০৮% একাকি থাকতে পছন্দ করে, যার সংখ্যা ৩২ লাখ (দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরে)। শিশু-কিশোরদের এই একাকিত্ব তাদেরকে সামাজিক নানা অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিবে, যা আমরা ইদানিং কালে অনেক বেশী দেখতে পাচ্ছি।

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ যোগ্য, চাই প্রতিরোধের ব্যবস্থা

স্বাস্থ্য সেবাকে শুধু চিকিৎসাকেন্দ্রিক করার কারণে এবং রোগ প্রতিরোধে সম্পুর্ণ উদাসীন নীতির কারণে মরনঘাতি অ-সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সম্পুর্ণভাবে নেই কিন্তু সরকারের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ নীতি থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় সম্ভব। আমরা জানি, দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত মাদক সেবন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, অনিরাপদ খাদ্য অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।

খাদ্য মানুষের সুস্থ্য থাকার একটি অন্যতম প্রধান শক্তি। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লক্ষ লোক খাদ্যে বিষস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত   হয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৪ সালে একই জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের আওতায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারে দেখা যায় ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি বিষাক্ত উপাদান শনাক্ত হয়। এসব খাদ্যে নিষিদ্ধ ডিডিটি থেকে শুরু করে রয়েছে কার্বামেড, কার্বাইড, অ্যালড্রিন, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, সিসা, ফরমালিনসহ আরো বেশ কিছু রাসায়নিক-ধাতব মিশ্রণের উপস্থিতি । এ সকল উপাদন শরীরে ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম কারণ।

বাজারের চিপস, ওয়েফার, চকোলেট ও জুসে কার্বোহাইড্রেড, মেলামিন অতিমাত্রায় থাকায় শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব খাবারের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ শিশুরা স্থূলতা ও উচ্চরক্ত চাপে ভুগছে, যার প্রধান কারণ শিশুদের এসব বাইরের খাবার খাওয়া। স্থূলতা ও উচ্চরক্ত চাপ ছাড়াও কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ নানা রোগে আক্রান্ত  হচ্ছে শিশুরা। এতে তারা প্রচন্ড স্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে।

কায়িক পরিশ্রম ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা একটি উত্তম মাধ্যম। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র গবেষণায় দেখা যায় ঢাকা শহরের ৪৪ % রাস্তায় ফুটপাত নেই এবং ৫৬% ফুটপাত হাঁটার উপযোগী নয়।  একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত নগরের বাসিন্দাদের জন্য নগরের মোট আয়তনের ১০ শতাংশ খোলা মাঠ ও পার্ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় এ জন্য আছে মাত্র চার শতাংশ জায়গা। । রাজধানীতে গড়ে দুই লাখ ৩০ হাজার ৭৬৯ জন মানুষের জন্য খেলার মাঠ আছে মাত্র একটি। আর অপ্রতুল হলেও এ পার্কগুলোও এখন দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শিশু-কিশোরদের জীবনচর্চা ও রোগ সমীক্ষায় দেখা যায়, সময়মতো খাবার খায় না ৭৪ শতাংশ, পড়ার টেবিল, বইখাতা গুছিয়ে রাখে না ২২ শতাংশ, দাঁত ব্রাশ করে না ৪ শতাংশ, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করে না ৫৯ শতাংশ, কাপড়চোপড় নিজে পরিষ্কার করে না ৫৯ শতাংশ, মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করে না ১৮ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, প্রতি বছর কমপক্ষে ২৮ লাখ মানুষ অধিক ওজন এবং স্থুলতার কারণে মারা যান। গবেষণার আওতাভুক্ত ১৬ হাজার ৪৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশই অধিক ওজনের অধিকারী অথবা স্থুল। স্থুলতার কারণে তারা ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার,  স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে বলে প্রমাণিত। গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থুলতা এবং অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি। ঢাকায় বায়ু দূষণে মরছে বছরে ১৫ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) এক রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দুষিত ২৫ শহরের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের তিনটি শহর নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা।

উপরের এ তথ্যগুলো সুপষ্টভাবেই বুঝিয়ে দেয় এমহুর্তে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি সরকারের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিমান চিকিৎসা সেবা বরাদ্ধ ও কার্যক্রম রয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সে ধরনের কোন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

চিকিৎসা ব্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষ

চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬.৪ মিলিয়ন বা ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।  দেশের শতকরা ৭৫ শতাংশ কিডনি রোগী ব্যয়বহুল কিডনী রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমর্থ হন না। বাংলাদেশ ১২ লক্ষ ক্যান্সার রোগী থাকলেও, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা পায় মাত্র ১ লক্ষ লোক। ২০০০ সালের তথ্য অনুসারে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬০ ভাগ মানুষের নিজের পকেট হতে যায়। স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে জনগনের অন্যান্য অত্যাবশকীয় জিনিসের উপর চাপ ফেলছে।

গরীব মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যয়ের বোঝা বহন করা অনেক কঠিন। সামগ্রিকভাবে পরিবারের আয়ের ৮.৮ শতাংশ চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়। কিন্তু গরিবের বেলায় দেখা যায় এর অনুপাত প্রায় ৩৮ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি, অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অনেক দরিদ্রই হয় ঋণগ্রস্ত হয় বা জমিজমা বিক্রি করে। হাসপাতালে ভর্তি হলে দরিদ্রদের খরচ আরো বেড়ে যায়। কেননা একদিকে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ে, আর কাজ করতে না পারায় আয় কমে যায়।

সাধারণ মানুষের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল সরকার পরিচালিত  স্বাস্থ্য সেবা
সরকার পরিচালিত  হাসপাতালগুলোর সেবার মান ও দুনীতি নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও এ কথা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই দেশের সাধারণ মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল হচ্ছে এ সকল হাসপাতাল। স্বাস্থ্য বুলেটিন এর তথ্য অনুসারে ২০১২ সালে বর্হিভিাগে সেবা নিয়েছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৮১ হাজার ১১৪ জন এবং ভর্তি হয়েছিল ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৮ জন রোগী। স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১৫ তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে ভর্তিকৃত ভোট রোগীর সংখ্যা ৫১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৭০ জন। কমিউনিটি হাসপাতালে প্রতিমাসে ৯০ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা সেবা নেয়। তবে রেফারেল ব্যবস্থা না থাকা, ডাক্তারের অনুপস্থিতি, ঔষধের অভাব, নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নষ্ট, অপরিচ্ছন্নতা, হাসপাতালে কর্মীদের দূব্যবহারের কারণে সরকারী চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে থাকে। এছাড়া মহানগর এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সরকার পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা ও বরাদ্ধ বৃদ্ধির কারণে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৪৮টি সেকেন্ডারী ও টারশেয়ারী হাসপাতাল।  আর এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

বেড়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক বেসরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা
১৯৮২ সালে একটা অধ্যাদেশ জারীর মাধ্যমে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আইনী বৈধতা দেওয়া হয়।  ১৯৮০ সালে সরকারী পরিচালনায় রাষ্ট্রায়াত হাসপাতাল ছিল ৫১০ টি এবং বেসরকারী ছিল ৩৯ টি, ১৯৯৮ সালে সরকারী হাসপাতালের সংখ্যা বেড়ে ৬৪৭ টি এবং বেসরকারী হাসপাতালের সংখ্যা দাড়ায় ৬২৬টি। ২০০৫-০৬ সালে এক তথ্যে দেখা যায মোট ৪ হাজার ১৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মাঝে ২ হাজার ১৬৮টি একক মালিকানায়  প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে  বাংলাদেশে ১৩৩৪১ টি প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিস ও ডায়গোনেসটিক সেন্টার আছে। সঠিক পরিসংখ্যান নেই।  স্বাস্থ্যখাত একটি বিশাল বানিজ্যিক খাত। ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যায় ৮ বছরে বেসরকারী চিকিৎসালয়ের আয় বেড়েছে ৫৩৬ শতাংশ, দিন দিন এর পরিমান বাড়ছে।

বেসরকারী চিকিৎসার উন্নয়নের লক্ষ্যে  ‘‘বেসরকারি চিকিৎসা সেবা আইন ২০০০’’ খসড়া প্রণয়ন করা হয়। আইনটি ২০০৩ ও ২০০৪ সালে আরো অধিকতর উন্নয়ন করে। ২০১০ সালে  “বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা আইন-২০১০’’ (খসড়া) নিয়ে আবার কিছুটা কাজ হয়। বর্তমানে  ‘‘বেসরকারী চিকিৎসা সেবা আইন-২০১৬’’ এর খসড়ার উপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিগত ১৬ বছরে আইনটি আলোর মূখ দেখেছি, আর এ পিছনে স্বাস্থ্য বানিজ্যের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছে। বর্তমানেও শুধুমাত্র চিকিৎসকদের প্রত্যক্ষ প্রভাবে আইনটি পর্যালোচনা কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে জনস্বার্থ কতটুকু রক্ষা পাবে বা একটি বড় প্রশ্ন।

ঔষধ বানিজ্য
স্বাস্থ্যখাতে অপর এক অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার নাম ঔষধ বানিজ্য। ঔষধ বানিজ্যের চিত্র পাওয়া যায়, ডাঃ মুনির উদ্দিন আহমদ এর লেখায় ‘‘১৯৮১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায়  জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা বাজারজাতকৃত ২ লাখ ওষুধ থেকে মাত্র ২৬টি ওষুধের একটি তালিকা প্রকাশ করে যেগুলোকে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়।

অধ্যাপক মোঃ সায়েদুর রহমান, ফার্মাকোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ-র মতে মানুষের চিকিৎসার জন্য খরচ করার ৩ টাকার মধ্যে ২ টাকা ব্যয় করে ঔষধে। বাংলাদেশে ঔষধের বাজার প্রায় ১৬০০০ কোটি টাকার। সরকার ঔষধের জন্য ব্যয় করে ৬৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫৩৫০ কোটি টাকার ঔষধ মানুষকে কিনতে হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১১০০ জেনরিক ঔষধের ২৪০০০ হাজার ব্রান্ড নাম রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যার মতে যে ঔষধ ব্যবহার হয় তার ৫০% প্রেসক্রিপশন বা ডিসপেন্সিং বা বিক্রি পর্যায়ে অযৌক্তিক/ভুল/ অসম্পূণ হয়ে থাকে। দেশে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ঔষধ নিম্ন মানের। সরকার যদি মাত্র ৩০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে, তবে সরকার পরিচালিত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের আর বাইরে হতে ঔষধ কিনতে হবে না।

জনস্বাস্থ্য ও বাজেট
বাংলাদেশের বর্তমান রোগ ও মৃত্যু পরিমাণ, কারণ এবং প্রকৃতি, চিকিৎসা ব্যয় ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে কতিপয় বিষয় সুপষ্ট হয়।
প্রথমত: বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও মৃত্যুর বাড়ছে, দ্বিতীয়ত: চিকিৎসা ব্যয়ের কারণ মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে প্রধান্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম গড়ে তোলা। এর পক্ষে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা রয়েছে যা প্রয়োগ করলে অ-সংক্রামক রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক প্রকাশনা অনুসারে নিরাপদ খাদ্য, পরিবেশ সংরক্ষন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ, কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৯টি নীতিমালা এবং ১৭ টি আইন রয়েছে। কিন্ত এ সকল আইন প্রয়োগে  যথেষ্ট গুরুত্ব না পাওয়ায় জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫, পরিবেশ আদালত আইন ২০১০, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর মতো জনস্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর বাস্তবায়নে যথেষ্ট ধীর এবং আশানুরূপ নয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে এ সকল আইন বাস্তবায়নে সাথে। সকলের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা ও অর্থের মাধ্যমে অনেক সাশ্রয়ীভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব।

বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার সমস্যা :  বাজেটে অর্থবৃদ্ধি কি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে না চাই সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রধান্য না দেয়া, স্বাস্থ্যখাতের দুনীতি ও অপব্যয়, নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারী চিকিৎসা ও ঔষধ বানিজ্য এ সকল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ না করে প্রতিবছর বরাদ্ধ বাড়ালেই জনগণের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি হবে না। স্বাস্থ্য সেবার কোন খাতে বরাদ্দ প্রয়োজন তার কোন মূল্যায়ন না করে এবং প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ‘ প্রতিবারের মতোই এবারও টাকার অংক বাড়িয়ে অবকাঠামো ও চিকিৎসার নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিলোসিস, স্ট্রোক, জন্মগত হার্ট ডিজিজ রোগীদের জন্য বরাদ্ধ বৃদ্ধি প্রশংসার দাবিদার। তবে মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা, দেয়ার কাজ স্বাস্থ্য বাজেটের অংশ নয়, এটা সমাজকল্যানের কাজ।

বিগত বছরগুলোতে বাজেটে টাকার অংকে বরাদ্ধ বেড়েছে, আর স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী হিসেবে আমরা হিসেবে করেছি অনুপাত। কিন্তু বড় হওয়া টাকার অংক এখনো একটি ক্ষেত্রে ও  মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। অবকাঠামো, পরীক্ষা নিরীক্ষার মেশিন, ঔষধ ক্রয়ের মতো খাতগুলোতে অবিরাম দুনীতি আর অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রচুর টাকা প্রতিবছর যাচ্ছে কিছু মানুষের পকেটে। বরাদ্ধ যত বাড়ছে বাড়ছে দুনীতি, অপব্যয়ও তাল দিয়ে বাড়ছে।। আর তাই বরাদ্ধকৃত টাকা সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রতি নজর দেয়া জরুরি। যে পরিমান বরাদ্ধ বিগত ৫ বছরে হয়েছে সে  সকল খাতের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা, আগামী দিনের উপকরণ ক্রয় বা অবকাঠামো নির্মাণের খাতের ব্যয়ের প্রয়োজনীয়াত কঠোরভাবে নিরীক্ষা করা জরুরি।

স্বাস্থ্য আন্দোলন জনগণের স্বাস্থ্য সবার মান বাড়ানো এবং যারা স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন সেসব এলাকা ও মানুষের জন্যে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী করছে।  স্বাস্থ্য বাজেটের ক্ষেত্রে সরকারের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রধান্য দেয়ার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি এলাকার চাহিদা নিরুপন এবং বরাদ্ধ ব্যবস্থা চালু, সরকারের রেফারেল ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, ওষুধ উৎপাদন, মূল্য, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো; উপকরণ ক্রয় বা অবকাঠামো নির্মাণের খাতের ব্যয়ে মনিটরিংসহ মতো খাতগুলো ব্যবস্থাপনার লক্ষে বরাদ্ধ ও মনোযোগী হওয়া জরুরি।

Saturday, October 8, 2016

‘উড়াল ফুটপাত’ টাকা নষ্ট করার একটা সীমা থাকা জরুরি!!!

কয়েকদিন আগে একটি প্রতিবেদন দেখলাম, পঙ্গু হাসপাতালের সামনে পথচারীদের সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রতিবেদন করা হয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের রোগীদের পক্ষে কি পথচারী সেতু অতিক্রম সম্ভব? আমাদের উপলব্ধি আর বিবেচনা কি নষ্ট হয়ে গেছে? আজ দেখলাম নগরে উড়াল ফুটপাত করার চিন্তা করছে। হায়রে উপলব্ধিহীন পরিকল্পনা.... পরিকল্পনাকারীরা হয়তো ভুলে গেছেন, ঢাকায় পথচারী অনেক সেতু তৈরি করা হয়েছিল। ঐ সকল সেতুতে মলমুত্র ত্যাগ ছাড়া কিছুই করা হতো না। তাই অনেকগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে অনেক ফুটওভার ব্রিজ আছে যেখানে মানুষ চলাচল করে না। অবাক বিষয় হচ্ছে, নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আর পরিকল্পনাবিদরা পরিকল্পনা করার সময় মানুষের আচরণ, সক্ষমতা, পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনা বিষয়টি এখনো উপলব্দি করেন না। ঢাকায় যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার একমাত্র সমাধানের গল্প আর স্বপ্ন দেখিয়ে কতিপয় সুবিধাবাভোগীরা সরকারকে দিয়ে অনেকগুলো ফ্লাইওভার তৈরি করিয়েছে। ফ্লাইওভার যানজট কমিয়ে দিয়েছে কি না তা সকলেই আমরা জানি। সরকারের উচিত নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী আর পরিকল্পনাবিদের একটি কমিশনের সামনে জবাবদিহী করতে বাধ্য করা। পরিকল্পনার ভুলের জন্য কোন জবাবদিহীতা না থাকায় একের পর এক ভুল প্রকল্প করে নগরকে জঞ্জালে পরিণত করছে। এখন আবার ‘উড়াল ফুটপাত’ করার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা করা হয় ব্যক্তিগত চলাচলের সুবিধা আর লাভজনক প্রকল্পের সাথে সম্পক রেখে। নগরের রাস্তাকে নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদরা নিজেদের চলাচলের পথ হিসেবের বাইরে চিন্তা করেন না। তাই তাদের পরিকল্পনা হয় শুধু প্রাইভেট গাড়ীর জন্য। বাস, হাঁটা, সাইকেল, রিকসায় চলাচলকারীদের তারা নগরের নাগরিক মনে করে না। নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদরা নিজেরা প্রতিদিন অফিসে লিফটে উঠেন। যদিও তারা জানেন সিড়ি দিয়ে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভাল। কিন্তু নিজেদের আরামের জন্য লিফট ব্যবহার করেন। তবে নাগরিককে কেন ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করতে বাধ্য করতে চান। যে নাগরিকটি কাজের জন্য প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হাঁটাতে হয়, তার পক্ষে কি পর্বত সমান ফুট্ওভার ব্রিজ নিয়মিত অতিক্রম সম্ভব। তাই সে নিচ দিয়ে পার হয়। শিকল, দড়ি, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়েও পথচারীদের এ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি। গাড়ীর জন্য সিগন্যাল হয়, পথচারীদের পরাপারে জন্য জেব্রা ক্রসিং আর সিগন্যাল হলে অনেক কম খরচে সমস্যার সমাধান হতো। পথচারীদের পরাপারের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন হলেই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। গত কয়েক সপ্তাহে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী গণপরিবহনে চড়ে একটি ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নগরি পরিবহন পরিকল্পনার সাথে জড়িত নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদের প্রতি সপ্তাহে সাধারণ নাগরিকদের মতো চলাচলে নিদেশনা প্রদান জরুরি। অনেকেরই হয়তো বড় বড় ডিগ্রি আছে কিন্তু নাগরিক যাতায়াত সমস্যা উপলব্ধি করার মতো জ্ঞান নেই। এ জ্ঞান বই পড়ে, বিদেশ ঘুরে, আরামদায়ক এসি গাড়ীতে চড়ে এবং অধীনস্তদের বন্দনাসুচক পরামর্শ হতে অর্জন সম্ভব নয়। নিজেদের চলাচলের সুবিধার পরামর্শ আর স্বপ্নময়ী প্রকল্পের মাধ্যমে এ নগরের সুবিধা অনেক ধ্বংশ করেছে কিছু ব্যক্তিরা। সরকারের উচিত এবার সবধান হওয়া। যাদের পরিকল্পনায় নগরের এ অবস্থা তাদের বাদ দেয়া ও জবাবদিহীতার আওতায় আনার সময় হয়েছে। ছবিটা নিউইয়ার্ক শহরের। নিউইয়ার্ক সাধারণ নাগরিকের জন্য যদি বাস, সাইকেল লেন আর পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিং করতে পারে, তবে ঢাকা কেন নয়? এ নগরের পরিকল্পনা সকল নাগরিকের জন্য কর উচিত। শুধু ভিআইপি আর এলিটদের জন্য পরিকল্পনা হলে এ নগর অচিরে বসবাসের অযোগ্য হবে।

তথ্যসুত্র

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাথা থেকে বের হওয়া উদ্ভট ধারণাটির নাম ‘উড়াল ফুটপাত’! এক কিলোমিটারের সামান্য বেশি এই হাঁটা পথের জন্য সম্ভাব্য খরচ ১১৫ কোটি টাকা মাত্র! ডিএসসিসির তহবিলে সম্ভবত অর্থের পাহাড় জমেছে, তা না হলে টাকা খরচ করতে তারা এত মরিয়া হবে কেন?





Monday, September 26, 2016

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় মালিকের সুবিধা বাড়ায় মালিক বাড়ায় নাগরিক নির্যাতন

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় মালিকের সুবিধা বাড়ায়
মালিক বাড়ায় নাগরিক নির্যাতন, #পরিবহন_ভাড়ায়_দুর্বৃত্তায়ন_বন্ধ_হোক
এখন সিএনজিতে উঠতে গেলে মিটার হতে অতিরিক্ত ২০ টাকা দাবি করে, অথবা কন্ট্রাকে যেতে বলে, অন্যথায় যাবে না। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় যথার্থ দায়িত্বের সাথে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেও, মালিকরা যখন নাগরিক হতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয় তখন যথার্থ দায়িত্ব পালণ করে না/ করতে পারে না। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাগরিক অধিকার রক্ষায় উদাসীন আচরণ জনগনকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে।
বেশ কয়েক মাস আগে সিএনজির মালিকদের জমা ও মিটারে ভাড়া বৃদ্ধি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাত্র অল্প কয়েকদিন চলার পরই সিএনজি চালকরা মিটার হতে ২০ টাকা বেশী ভাড়া দাবী করে। বিআরটিএ দিন কয়েক রাস্তয় মোবাইল কোর্ট চালাল তার আর কোন খবর নেই। শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ প্রতিদিন সিএনজি মালিক আর চালকদের নিয়মের কাছে জিম্মি।
আজ কদিন সিএনজি চালকরা মিটার হতে ৩০ টাকা বেশি দাবি করছে। রাষ্ট্রের আইনের পরও সিএনজি মালিক আর চালকরা নিজেদের আইন প্রয়োগ করে। আর ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণলায় ও তার অধীন সংস্থাগুলো কিছু রুটিন কাজ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
সিএনজির এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বিআরটিএতে অভিযোগ করতে হবে। তারপর তারা শুনানিতে ঢাকবে, তারপর প্রতিকার। কোন সাধারন নাগরিকের পক্ষে এ নগরে এভাবে সময় দেয়ার ক্ষমতা আছে? প্রতিদিন যে পরিমান সিএনজিকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়, এ পরিমান অভিযোগ জমা দিলে কোন নাগরিককে আর অন্য কোন কাজ করতে হবে না।
জনগনের নির্যাতন বন্ধে, মাটিতে নেমে আসুন
রাষ্ট্রের আইনের পর আইন বানিয়ে মালিক আর সিএনজি চালকদের নির্যাতন বন্ধে সড়ক পরিবহন ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের রাস্তায় নামতে হবে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রাস্তায় সিএনজি থামিয়ে নাগরিককে জানতে চান চালক অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছি কিনা? ট্রাফিক পুলিকদের এ কাজে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করুন। রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্রণের সেবকদের বেতন ও নানা সুবিধা বাড়িয়েছে, এখন নাগরিকে শান্তি দিন।
প্রস্তাবনা
১) চালকদের অপেক্ষা মালিকদের বেশি করে জরিমানা করার পদক্ষেপ গ্রহণ;
২) সড়ক পরিবহন ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের মনিটরিংএ নিয়মিত রাস্তায় থাকা নিশ্চিত করা;
৩) মোবাইল কোর্টে সবসময় একই জায়গায় না বসিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসানো;
৪) ট্রাফিক পুলিশদের সিএনজি মিটারের ভাড়ায় চলাচল নিশ্চিতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব প্রদান;
৫) প্রয়োজনে সিএনজির লাইসেন্স বাতিলে পদক্ষেপ গ্রহণ;
#পরিবহন_ভাড়ায়_দুর্বৃত্তায়ন_বন্ধ_হোক

Monday, August 1, 2016

বাবা তোমার জন্য..

সন্ধ্যায় অফিস হতে বাসায় ফিরে একদিন দেখি ঘরে কেউ নেই। ফোন দিলাম, শুনি বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে শরীর খারাপ লাগছিল তাই। দৌড়ে গেলাম হাসপাতালে..
বাবা বিছানায় শোয়া.. পাশে বসলাম, বললাম আমাকে জানানি কেন?
সবাই বলার আগে বাবা বললেন.. ভয় পাইস না, কোন সমস্যা নাই। তুই কত কাজ করস, আবার দৌড়াবি...
বাবা অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকে.. যত কষ্ট হোক রাতে বাসায় ফিরতাম।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, কাজ শেষ করে বাসায়। দেশের বাইরে গেলে মনে হয় না কখনো একদিন কাজের বাইরে কাটিয়েছি। আমার কেমন যেন ভয় পেয়ে বসেছিল।
বাবা যেদিন মারা যান শেষ দেখা সন্ধ্যায়, আমি ঘরে ঢুকছি। বাবা হেটে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছেন ভাইয়ার সাথে।
বাবা অসুস্থ্য? বললেন না.. একটু খারাপ লাগছে।
সেদিন রাতেই জরুরি প্রয়োজনে বাসার বাইরে আমাকে যেতে হয়। মোবাইল ফোনের চার্জও শেষ হয়।
রাতে ছিোম গাজীপুরায় খালার বাসায়। গভীর রাতে আমার ভাই রুবেল ঢেকে তুলে বলল, চল বাসায় যাই।
আমি বুঝার চেষ্টা করলাম।
বাসায় ফিরে দেখি বাবা নেই....
সেদিন রাতে বাসায় না ফেরার কষ্ট আমি অনেক দিন ভুগেছি।
বাবাকে শেষ না দেখার কষ্ট অনেক দিন কষ্ট পেয়েছি।
এখনও কাজের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যেতে হয়। তখন ভয় আর কষ্ট আরো বেশি পেয়ে বসে।... ভয় আর কষ্ট দুটো এক সাথে কঠিন ব্যাধি.....
বাবাকে হারানো রাতের ভয়, আমাকে তাড়ায়... অধিকাংশ সময় আমার ঘুম আসে না। শহরের রাস্তায় একা ঘুরে, আমি সেই ভয় কাটানো চেষ্টা করি। আর প্র্রশ্নের ‍উত্তর খুজি...
বাবা কি শেষ সময় আমাকে কিছু বলতেন?
প্রশ্নের উত্তর অনেকদিন পাই না....
‪#‎বাবা_আব্বা‬