কয়েকদিন আগে একটি প্রতিবেদন দেখলাম, পঙ্গু হাসপাতালের সামনে পথচারীদের সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রতিবেদন করা হয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের রোগীদের পক্ষে কি পথচারী সেতু অতিক্রম সম্ভব? আমাদের উপলব্ধি আর বিবেচনা কি নষ্ট হয়ে গেছে? আজ দেখলাম নগরে উড়াল ফুটপাত করার চিন্তা করছে। হায়রে উপলব্ধিহীন পরিকল্পনা....
পরিকল্পনাকারীরা হয়তো ভুলে গেছেন, ঢাকায় পথচারী অনেক সেতু তৈরি করা হয়েছিল। ঐ সকল সেতুতে মলমুত্র ত্যাগ ছাড়া কিছুই করা হতো না। তাই অনেকগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে অনেক ফুটওভার ব্রিজ আছে যেখানে মানুষ চলাচল করে না। অবাক বিষয় হচ্ছে, নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আর পরিকল্পনাবিদরা পরিকল্পনা করার সময় মানুষের আচরণ, সক্ষমতা, পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনা বিষয়টি এখনো উপলব্দি করেন না।
ঢাকায় যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার একমাত্র সমাধানের গল্প আর স্বপ্ন দেখিয়ে কতিপয় সুবিধাবাভোগীরা সরকারকে দিয়ে অনেকগুলো ফ্লাইওভার তৈরি করিয়েছে। ফ্লাইওভার যানজট কমিয়ে দিয়েছে কি না তা সকলেই আমরা জানি। সরকারের উচিত নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী আর পরিকল্পনাবিদের একটি কমিশনের সামনে জবাবদিহী করতে বাধ্য করা। পরিকল্পনার ভুলের জন্য কোন জবাবদিহীতা না থাকায় একের পর এক ভুল প্রকল্প করে নগরকে জঞ্জালে পরিণত করছে। এখন আবার ‘উড়াল ফুটপাত’ করার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে।
ঢাকার পরিবহন পরিকল্পনা করা হয় ব্যক্তিগত চলাচলের সুবিধা আর লাভজনক প্রকল্পের সাথে সম্পক রেখে। নগরের রাস্তাকে নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদরা নিজেদের চলাচলের পথ হিসেবের বাইরে চিন্তা করেন না। তাই তাদের পরিকল্পনা হয় শুধু প্রাইভেট গাড়ীর জন্য। বাস, হাঁটা, সাইকেল, রিকসায় চলাচলকারীদের তারা নগরের নাগরিক মনে করে না।
নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদরা নিজেরা প্রতিদিন অফিসে লিফটে উঠেন। যদিও তারা জানেন সিড়ি দিয়ে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভাল। কিন্তু নিজেদের আরামের জন্য লিফট ব্যবহার করেন। তবে নাগরিককে কেন ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করতে বাধ্য করতে চান।
যে নাগরিকটি কাজের জন্য প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হাঁটাতে হয়, তার পক্ষে কি পর্বত সমান ফুট্ওভার ব্রিজ নিয়মিত অতিক্রম সম্ভব। তাই সে নিচ দিয়ে পার হয়। শিকল, দড়ি, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে দিয়েও পথচারীদের এ প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়নি।
গাড়ীর জন্য সিগন্যাল হয়, পথচারীদের পরাপারে জন্য জেব্রা ক্রসিং আর সিগন্যাল হলে অনেক কম খরচে সমস্যার সমাধান হতো। পথচারীদের পরাপারের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধা নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন হলেই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।
গত কয়েক সপ্তাহে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী গণপরিবহনে চড়ে একটি ভাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নগরি পরিবহন পরিকল্পনার সাথে জড়িত নীতিনিধারক, সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, আইনপ্রয়োগকারী আর এলিট পরিকল্পনাবিদের প্রতি সপ্তাহে সাধারণ নাগরিকদের মতো চলাচলে নিদেশনা প্রদান জরুরি। অনেকেরই হয়তো বড় বড় ডিগ্রি আছে কিন্তু নাগরিক যাতায়াত সমস্যা উপলব্ধি করার মতো জ্ঞান নেই। এ জ্ঞান বই পড়ে, বিদেশ ঘুরে, আরামদায়ক এসি গাড়ীতে চড়ে এবং অধীনস্তদের বন্দনাসুচক পরামর্শ হতে অর্জন সম্ভব নয়।
নিজেদের চলাচলের সুবিধার পরামর্শ আর স্বপ্নময়ী প্রকল্পের মাধ্যমে এ নগরের সুবিধা অনেক ধ্বংশ করেছে কিছু ব্যক্তিরা। সরকারের উচিত এবার সবধান হওয়া। যাদের পরিকল্পনায় নগরের এ অবস্থা তাদের বাদ দেয়া ও জবাবদিহীতার আওতায় আনার সময় হয়েছে।
ছবিটা নিউইয়ার্ক শহরের। নিউইয়ার্ক সাধারণ নাগরিকের জন্য যদি বাস, সাইকেল লেন আর পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিং করতে পারে, তবে ঢাকা কেন নয়?
এ নগরের পরিকল্পনা সকল নাগরিকের জন্য কর উচিত। শুধু ভিআইপি আর এলিটদের জন্য পরিকল্পনা হলে এ নগর অচিরে বসবাসের অযোগ্য হবে।
তথ্যসুত্র
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাথা থেকে বের হওয়া উদ্ভট ধারণাটির নাম ‘উড়াল ফুটপাত’! এক কিলোমিটারের সামান্য বেশি এই হাঁটা পথের জন্য সম্ভাব্য খরচ ১১৫ কোটি টাকা মাত্র! ডিএসসিসির তহবিলে সম্ভবত অর্থের পাহাড় জমেছে, তা না হলে টাকা খরচ করতে তারা এত মরিয়া হবে কেন?
প্রাসঙ্গিক লেখা আমি পথচারী, অপরাধী নই , পথচারীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য যা জরুরী, জনতার যাতায়াতে দুর্ভোগ কে দেখবে
No comments:
Post a Comment