Thursday, July 3, 2014

খাদ্যের বিষাক্ততা: বিদ্যমান আইনসমূহ

খাদ্যের বিষাক্ততা: বিদ্যমান আইনসমূহ
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আইনজীবী ও নীতিবিশ্লেষক

খাদ্যে বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার বর্তমান সময়ে দেশের জনগনের মাঝে এক আতংকের বিষয়। দ্রুত লাভের স্বার্থে কিছু ব্যবসায়ীরা মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানান বিষাক্ত কেমিক্যাল, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংস, জুস, সেমাই, আচার নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, পানিতে ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই, লবণে সাদা বালু, চায়ে করাতকলের গুঁড়া, গুঁড়া মসলায় ভূষি, কাঠ, বালু, ইটের গুঁড়া ও বিষাক্ত গুঁড়া রং ব্যবহার করছে। ফলে  কোনো খাবারই নিরাপদ নয়। এই বিশেষ দিকগুলো চরম উপেক্ষা করায় জনস্বাস্থ্য দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।

বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা অসংক্রামক রোগের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অসংক্রামক রোগ। এ অঞ্চলে বছরে প্রায় ৭৯ লক্ষ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায় । মানুষের মাঝে অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যভাস। খাদ্যে ভেজালসহ নানা কারণে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্যে  ভেজাল শুধু বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্যও ক্ষতিকর। গবেষকরা এ অবস্থাকে নীরব গণহত্যা হিসেবে অবহিত করেছেন।

বাংলাদেশ সংবিধান ও জনস্বাস্থ্য:
দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ্য জাতি। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশ সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে দিক নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) অনুসারে চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) জনগনের পুষ্টিস্তর উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

একজনক মানুষের পরিপূর্ণ শারিরীক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের প্রয়োজন। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।  জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য বন্ধ করা সরকারের সংবিধানিক দায়িত্ব।

খাদ্য নিরাপত্তা ও মান রক্ষায় সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান, কিন্তু রয়েছে সমন্বয়হীনতা:
খাদ্য নিরাপত্তা ও মান রক্ষায় বাংলাদেশের সরকারের একাধিক সংস্থা দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের ৭টি মন্ত্রণালয় নিরাপদ ও মান সম্মত  খাদ্য নিশ্চিতের সাথে সরাসরি জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরগুলোর উপরও বিভিন্ন দায়িত্ব সুপষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। খাদ্য উৎপাদন, মজুদ, বিপনন, বাজারজাতকরণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য মান রক্ষার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, বানিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস অধিদপ্তর,  বিএসটিআই, বিসিএসআইআর এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সংস্থাগুলোর নীতিমালা, আইন ও কার্যপরিধিতে খাদ্য মান রক্ষা সংক্রান্ত সুপষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পুলিশকে বিভিন্ন আইনে অধীন আইন বাস্তবাস্তবায়নে সহযোগিতার বাধ্যকতা রয়েছে। খাদ্যের সাথে এ সকল মন্ত্রণালয়গুলোর সম্পৃক্ততা থাকলেও এ সংস্থাগুলোর একটির সাথে অন্যগুলোর সমন্বয় নেই। এ সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য ও জীবন রক্ষাকারী ঔষধ লাগামহীনভাবে বিপনন ও বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। More details https://drive.google.com/file/d/0B3TFp2YeMJ5VU1FwZ09ET3hOQ2M/edit?usp=sharing