Saturday, November 9, 2013

অচ্ছুৎ রিকশার নির্যাতিত যাত্রী



ঢাকার অধিকাংশ মার্কেটের সামনে নামার সাথে সাথে দেখবেন নিরাপত্তাকর্মী লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে রিকশাগুলোর পিছনে সজোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করে সড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু প্রাইভেট গাড়ি মার্কেট সামনে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ঢাকায় এখনো অধিকাংশ মানুষ রিকশায় চড়ে মার্কেটে যায়। তারপরও রিকশাকে সরিয়ে দেয়া হলেও, গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে পারে অভিজাত্য আর ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে।

মার্কেটের সাধারণ একজন নিরাপত্তাকর্মী কাছে রিকশা অবজ্ঞা পাওয়ার পিছনে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রভাব রয়েছে। প্রথম ১৯৮৮ সাল হতে রিকশার লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করা হয়। পরবর্তী ২০০২ হতে বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের অজুহাতে রিকশা প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। রিকশা বন্ধ করা হলে যানজট কমবে না, এ বিষয়ে পরিবেশবাদীরা নানাভাবে আন্দোলন করে চলছে। কিন্তু অদুরদর্শী নীতি ও ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠীর প্রভাবে রিকশা বন্ধ হয় এবং ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ীর অধিপত্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ঢাকা শহরের যানজটের কারণ প্রাইভেট গাড়ী, কিন্তু নীতিনির্ধারকগন এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।

রিকশা নামক বাহনটির বিষয়ে উদাসীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও। বাড়ী, মার্কেটে গাড়ী পার্কিং করার জন্য কি পরিমান জায়গা রাখতে হবে তা নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা আছে। অথচ একটি মার্কেটে রিকশা বা পাবলিক পরিবহনে যাত্রী কিভাবে আসবে বা নামবে তার জন্য কোন অবকাঠামোগত পরিকল্পনা নেই সংস্থাটির। নগরের মার্কেটে সামনের মূল রাস্তা হতে আলাদা জায়গা রাখা প্রয়োজন যেখানে রিকশা যাত্রীদের নামিয়ে দিতে পারে। বর্তমানে রিকশা চালককে রাস্তার উপর যাত্রী নামাতে হয়, যা মার্কেটের সামনে যানজটের সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন সংস্থাগুলো ঢাকায় যেভাবে ফ্লাইওভার তৈরি করছে, রাস্তা মূলত কোন সংস্থার অধীন তা নির্ধারণ করা একটি জটিল বিষয়। তবে সহজ দৃষ্টিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে দায়ী করা যেতে পারে। ঢাকার যে রাস্তায় রিকশা চলে তার অধিকাংশ নিঃসন্দেহে ভাঙ্গা, কোথাও ময়লার ডাস্টবিন, অর্থাৎ কোন না কোন প্রতিবন্ধকতা রয়েছেই। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ হতে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়। এ সকল রাস্তায় রিকশা বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট গাড়ী রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিউমার্কেটের মতো জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের ইজারা নিয়ে গাড়ী পার্কিং করতে পারে রাস্তা জুড়ে।

রিকশার উপর সরকারী সংস্থাগুলোর বৈষম্যমূলক নীতির ফলাফল হচ্ছে কিছু দিন পূর্বে বারিধারা সোসাইটি ঘোষণা করে, সে এলাকায় লুঙ্গি পরা কোন রিকশাচালক প্রবেশ করতে পারবে না। এ ঘোষণার ব্যপক প্রতিবাদ হয় এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যা এ ধরনের অদ্ভুত নির্দেশনার অযৌক্তিকতা ও অগ্রহণযোগ্যতাকে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে।

যানজটের কারণে বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হলে, প্রাইভেট গাড়ী বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নে উত্তর অনেকে অনেকভাবে দিতে চেষ্টা করেন। তবে সত্য হচ্ছে এক সময়কার রিকশায় চলা নীতিনির্ধারকরা গাড়ীকে ক্ষমতা আর অভিজাত্যের প্রতীক মনে করেন। তাই ৫% গাড়ীর জন্য  ৩৮% নাগরিকের চলাচলের বাহনকে অচ্ছুৎ মনে করে।

রিকশা লাইসেন্স বন্ধ, বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা প্রবেশ নিষিদ্ধ, রিকশা করে সুষ্টভাবে চলাচলে কোন পরিকল্পনা না থাকা, মার্কেটের সামনে রিকশা থামানোর জায়গা না থাকায় কতগুলো সুপষ্ট প্রভাব যাত্রীদের উপর পড়ে, যা এক ধরনের নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে যাবে। প্রথমত রিকশার যাত্রীদের যাতায়াত এখন অনেক কষ্টের হয়ে পড়েছে। অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়, আর যে রাস্তায় যেতে হয় তাতে ভাঙ্গাসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  আর দ্বিতীয় নির্যাতন হচ্ছে রিকশা ভাড়া। এ সকল সমস্যাকে পুঁজি করে রিকশা চালকরা ভাড়া চাচ্ছে যখন যার যেমন ইচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির জন্য শুধু একটি ঘটনা দরকার। আর এই ঢাকা নগর ঘটনার শহর। ভাড়া বৃদ্ধি জন্য রিকশা চালকদের কোন বেগ পেতে হয় না।

রিকশা এ নগরে সাধারণ মানুষের বাহন। রিকশাকে অচ্ছুৎতের মতো  ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তার প্রেক্ষিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পরিবেশ বান্ধব বাহন রিকশার জন্য এ অবস্থা কোনভাবেই কাম্য নয়। স্থানীয় সরকারের উচিত রিকশা চলাচলে সুষ্ট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে রিকশার জন্য পৃথক লেন প্রদান, ভাড়া নির্ধারণ, যে রাস্তা রিকশাগুলো চলাচল করে তা মেরামত করা। সাধারণ মানুষের ঘরের দরজায় পৌঁছে দেয়া বাহন রিকশাকে অবজ্ঞা করে একটি পরিপুর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা কোনভাবেই গড়ে উঠতে পারে না।