গণভোট ক্ষমতায়িত হোক জনগন
নিবার্চন প্রস্তুতি হবে জনগনের জন্য আনন্দের, জনগন নিজের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন, নির্বাচিত করবেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এ দেশের প্রতিটি মানুষ উৎকন্ঠা আর আতংকে দিন কাটে। দুঃখজনক হলেও সত্য গণতন্ত্র যেন বন্দী ব্যক্তির ইচ্ছাতন্ত্রের কাছে। আর এ ইচ্ছার নিকট জিম্মি জনগন আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। প্রশ্ন হচ্ছে এ অবস্থাই চলতে থাকবে। না আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছার উপর জনগনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করবো।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুসারে এ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস জনগন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে আর সংখ্যাগরিষ্ট জনপ্রতিনিধি দলের সদস্যরা মিলে সরকার গঠন করে। সমস্যা শুরু হয় এখান থেকেই, যে দল ক্ষমতা যেে ত পারেন না তারা আন্দোলনের শুরু করে, আর ক্ষমতা থাকা দল আন্দোলন ঠেকানোর কৌশল নেয়। বিরোধী দলে থাকা রাজনৈতিক দলের সংসদে যাওয়ার আগ্রহ থাকে না, আর ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা থাকেন ব্যস্ত। কোরাম সংকটে অধিবেশন শুরু করা যাচ্ছে না এ খবর প্রায়শই আসে। যারা বক্তব্য রাখেন, জনগনের সমস্যা তুলে ধরা অপেক্ষো বন্দনা আর গঞ্জনা করে তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। ক্ষমতাসীন দলের অনেক জনপ্রতিনিধিকে কাছে পাওয়া জনগণের জন্য বড়ই দুস্কার। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে জনবিরোধী কাজের।
সমস্যা হচ্ছে ভোট দেয়ার পর জনগণের কোন ক্ষমতা থাকে না জনপ্রতিনিধির উপর। জনপ্রতিনিধির ইচ্ছাই জনতার ইচ্ছা ধরে নেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা যে কোন সিদ্ধান্তে গৃহীত হয় দেশের ভাগ্য। আর দুই তৃতীয়াংশ সদস্যরা সংবিধান পরিবর্তন করে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এ সিদ্ধান্তগুলোর পক্ষে বা বিপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই জনগন অবস্থান নেয়, কিন্তু জনগনের ইচ্ছে জানার বা শোনার প্রক্রিয়া নেই। ক্ষমতাসীন দল আর বিরোধীদল উভয়ই বলে জনগণ তার পক্ষে। শুরু উভয়ের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী আর পিষ্ট হয় জনগণ।
এ অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই দরকার, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতময় অবস্থান নেয়, তখন যেন জনগণ ক্ষমতা আর অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। অবার যদি কোন জনপ্রতিনিধি তার দায়িত্ব পালন না করেন বা জনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় তখন জনগন যাতে তার সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারে। এ ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাতন্ত্রের অবসান ঘটাবে এবং জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল করে পারে।
বাংলাদেশ সংবিধানে ২০১১ সালে সংশোধনীর পূর্বে গণভোটের বিধান ছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২ (১ক) অনুসারে মুলনীতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৮, রাষ্ট্রপ্রতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৪৮, মন্ত্রী সভা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৫৬ সংক্রান্ত বিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এ বিধানবলী সংশোধনে সম্মতিদান করবেন কি, করিবেন না এ বিষয়ে গণভোটে প্রেরণের বিধান ছিলে। ১৯৯১ সালে গণভোট সংক্রান্ত একটি আইনও প্রনয়ণ করা হয় । কিন্তু দুঃখজনক এই আইনের প্রয়োগ হয়নি। জনগণের ক্ষমতায়নের বিষয়ে এ বিধানটি খুবই শক্তিশালী । যদিও ১৪২ অনুচ্ছেদেও (১ঘ) (১গ) তে বলা হয়েছিল এ দফার কোন কিছুই মন্ত্রীসভা বা সংসদের উপর আস্থা বা অনাস্থা বলিয়ে গণ্য হবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিদলগুলোর সকল বিষয়ে বিপরীত অবস্থানের পরিস্থিতিতে গণভোট একটি কার্যকর উপর। রাষ্ট্র পরিচলানার বিরোধপূর্ণ বিষয়, সরকার গঠন বা সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে জনগণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কি ব্যবস্থা চায়। জনগনের ক্ষমতায়নের জন্য গণভোটের পরিধি আরো বিস্তৃতি করা প্রয়োজন। জনগনের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালণ করছেন না বা বা জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা জনগনের থাকা উচিত। বর্তমান সময়ে জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য জবাবদিহীতা নিশ্চিতের ব্যবস্থা দুর্বল।
বিগত তত্ত¦াবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন না ভোটের বিধান করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি পুর্ণাঙ্গ ছিল না। কিন্তু যদি এমন বিধান থাকত যে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ না ভোট হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ আয়োজন করতে হবে। তবে অনেক মানুষই হয়তো না ভোটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতো।
জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট এবং জাতীয় সংসদে প্রণীত কোন আইনের বিষয়ে জনমন প্রদান ও বিবেচনার বাধ্যতা আইন প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় নীতি প্রণয়নে যা জনগণকে ক্ষমতায়িত্ব করবে। বর্তমানে কোন নীতি বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় হতে জনমন যাচাইয়ের বিধান করা হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তবে এ মতামত গ্রহণ করার বা বিবেচনার কোন বাধ্যকতা বিষয়ে কোন সুপষ্ট নির্দেশনা নেই।
গংসদে দলের বিপক্ষে অবস্থানের জন্য জনপ্রতিনিদিরে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান থাকলেও, জবাবদিহীতা নিশ্চিতে বর্তমানে জনগনের কোন ক্ষমতাই নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো প্রাথমিকভাবে দলীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যেখানে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের অভিযোগ প্রদান করা যাবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংসদে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন যেখানে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগন অভিযোগ করতে পারে। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তবে আইনের দ্বারা অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের বিধান রয়েছে। এ বিধান অনুসারে ন্যায়পাল কোন মন্ত্রণালয়, সরকারী কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের যে কোন কাজ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ১৯৮০ সালে ন্যায়পাল আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইনটির বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত আলোরমূখ দেখেনি। নাগরিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ন্যায়পালকে জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি।
স্থানীয় সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আইনীভাবে যেমন দূর্বল করে রাখা হযেছে। আবার স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের রয়েছে ব্যপক স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ। বিদ্যমান আইন অনুসারে স্থানীয় সরকার প্রতিনিদিদের বিরুদ্ধে নির্বাহীকে পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষমতা জনগনের কাছে কিছুটা প্রদান করা জরুরি। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বা তাদের কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগনকে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহনের ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে না ভোটা বা অনাস্থা উত্থাপনের ক্ষমতা, তাদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ এবং দায়িত্বশীল আচরণে উদ্ধ্দ্ধু করবে।
রাজনীতি বিশ্বের অন্যতম মহৎ জনসেবা। তবে যদি তা নিঃস্বার্থ ও মানুষের কল্যাণের জন্য হয়। আমরা যদি মনে করি শুধু আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে নীতির অভাব রয়েছে, তবে তা ভুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই রাজনীতিবিদ বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজনীতির অঙ্গনকে দুষণমুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসানে আইন ও নীতি প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি হলেই তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাবে এ ধরনের মানসিকতার অবসান জরুরি। জনপ্রতিনিধি নাগরিক হিসেবে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। দায়িত্ব পালণ শেষে তিনি আবার একজন নাগরিক।
গণভোট, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা, সমর্থন প্রত্যাহারের বিধান আজ এ প্রস্তাবনাগুলোকে হয়তো কঠিন মনে হবে। কিন্তু এ দিন এ বিষয়গুলো রাজনীতিবিদরা নিয়ে আসবে। আজ যা ভাবব, কেউ এ কথা বলবে, যখন কিছু লোক এ কথা বলবে, অনেক লোক ভাববে, আর কিছু লোক দাবি আদায়ে সংগঠিত হবে। তবেই রাজনীতিবিদরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।
নিবার্চন প্রস্তুতি হবে জনগনের জন্য আনন্দের, জনগন নিজের পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন, নির্বাচিত করবেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এ দেশের প্রতিটি মানুষ উৎকন্ঠা আর আতংকে দিন কাটে। দুঃখজনক হলেও সত্য গণতন্ত্র যেন বন্দী ব্যক্তির ইচ্ছাতন্ত্রের কাছে। আর এ ইচ্ছার নিকট জিম্মি জনগন আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। প্রশ্ন হচ্ছে এ অবস্থাই চলতে থাকবে। না আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছার উপর জনগনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করবো।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুসারে এ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস জনগন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে আর সংখ্যাগরিষ্ট জনপ্রতিনিধি দলের সদস্যরা মিলে সরকার গঠন করে। সমস্যা শুরু হয় এখান থেকেই, যে দল ক্ষমতা যেে ত পারেন না তারা আন্দোলনের শুরু করে, আর ক্ষমতা থাকা দল আন্দোলন ঠেকানোর কৌশল নেয়। বিরোধী দলে থাকা রাজনৈতিক দলের সংসদে যাওয়ার আগ্রহ থাকে না, আর ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা থাকেন ব্যস্ত। কোরাম সংকটে অধিবেশন শুরু করা যাচ্ছে না এ খবর প্রায়শই আসে। যারা বক্তব্য রাখেন, জনগনের সমস্যা তুলে ধরা অপেক্ষো বন্দনা আর গঞ্জনা করে তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। ক্ষমতাসীন দলের অনেক জনপ্রতিনিধিকে কাছে পাওয়া জনগণের জন্য বড়ই দুস্কার। আবার অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে জনবিরোধী কাজের।
সমস্যা হচ্ছে ভোট দেয়ার পর জনগণের কোন ক্ষমতা থাকে না জনপ্রতিনিধির উপর। জনপ্রতিনিধির ইচ্ছাই জনতার ইচ্ছা ধরে নেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা যে কোন সিদ্ধান্তে গৃহীত হয় দেশের ভাগ্য। আর দুই তৃতীয়াংশ সদস্যরা সংবিধান পরিবর্তন করে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এ সিদ্ধান্তগুলোর পক্ষে বা বিপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই জনগন অবস্থান নেয়, কিন্তু জনগনের ইচ্ছে জানার বা শোনার প্রক্রিয়া নেই। ক্ষমতাসীন দল আর বিরোধীদল উভয়ই বলে জনগণ তার পক্ষে। শুরু উভয়ের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী আর পিষ্ট হয় জনগণ।
এ অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই দরকার, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতময় অবস্থান নেয়, তখন যেন জনগণ ক্ষমতা আর অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। অবার যদি কোন জনপ্রতিনিধি তার দায়িত্ব পালন না করেন বা জনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় তখন জনগন যাতে তার সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারে। এ ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাতন্ত্রের অবসান ঘটাবে এবং জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বশীল করে পারে।
বাংলাদেশ সংবিধানে ২০১১ সালে সংশোধনীর পূর্বে গণভোটের বিধান ছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২ (১ক) অনুসারে মুলনীতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৮, রাষ্ট্রপ্রতি সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৪৮, মন্ত্রী সভা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৫৬ সংক্রান্ত বিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এ বিধানবলী সংশোধনে সম্মতিদান করবেন কি, করিবেন না এ বিষয়ে গণভোটে প্রেরণের বিধান ছিলে। ১৯৯১ সালে গণভোট সংক্রান্ত একটি আইনও প্রনয়ণ করা হয় । কিন্তু দুঃখজনক এই আইনের প্রয়োগ হয়নি। জনগণের ক্ষমতায়নের বিষয়ে এ বিধানটি খুবই শক্তিশালী । যদিও ১৪২ অনুচ্ছেদেও (১ঘ) (১গ) তে বলা হয়েছিল এ দফার কোন কিছুই মন্ত্রীসভা বা সংসদের উপর আস্থা বা অনাস্থা বলিয়ে গণ্য হবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিদলগুলোর সকল বিষয়ে বিপরীত অবস্থানের পরিস্থিতিতে গণভোট একটি কার্যকর উপর। রাষ্ট্র পরিচলানার বিরোধপূর্ণ বিষয়, সরকার গঠন বা সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে জনগণই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কি ব্যবস্থা চায়। জনগনের ক্ষমতায়নের জন্য গণভোটের পরিধি আরো বিস্তৃতি করা প্রয়োজন। জনগনের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালণ করছেন না বা বা জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা জনগনের থাকা উচিত। বর্তমান সময়ে জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য জবাবদিহীতা নিশ্চিতের ব্যবস্থা দুর্বল।
বিগত তত্ত¦াবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন না ভোটের বিধান করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি পুর্ণাঙ্গ ছিল না। কিন্তু যদি এমন বিধান থাকত যে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ না ভোট হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ আয়োজন করতে হবে। তবে অনেক মানুষই হয়তো না ভোটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতো।
জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের বিধান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট এবং জাতীয় সংসদে প্রণীত কোন আইনের বিষয়ে জনমন প্রদান ও বিবেচনার বাধ্যতা আইন প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় নীতি প্রণয়নে যা জনগণকে ক্ষমতায়িত্ব করবে। বর্তমানে কোন নীতি বা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় হতে জনমন যাচাইয়ের বিধান করা হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক। তবে এ মতামত গ্রহণ করার বা বিবেচনার কোন বাধ্যকতা বিষয়ে কোন সুপষ্ট নির্দেশনা নেই।
গংসদে দলের বিপক্ষে অবস্থানের জন্য জনপ্রতিনিদিরে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান থাকলেও, জবাবদিহীতা নিশ্চিতে বর্তমানে জনগনের কোন ক্ষমতাই নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো প্রাথমিকভাবে দলীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যেখানে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের অভিযোগ প্রদান করা যাবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংসদে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন যেখানে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগন অভিযোগ করতে পারে। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তবে আইনের দ্বারা অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের বিধান রয়েছে। এ বিধান অনুসারে ন্যায়পাল কোন মন্ত্রণালয়, সরকারী কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের যে কোন কাজ সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ১৯৮০ সালে ন্যায়পাল আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইনটির বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত আলোরমূখ দেখেনি। নাগরিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ন্যায়পালকে জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি।
স্থানীয় সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আইনীভাবে যেমন দূর্বল করে রাখা হযেছে। আবার স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের রয়েছে ব্যপক স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ। বিদ্যমান আইন অনুসারে স্থানীয় সরকার প্রতিনিদিদের বিরুদ্ধে নির্বাহীকে পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষমতা জনগনের কাছে কিছুটা প্রদান করা জরুরি। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বা তাদের কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগনকে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহনের ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে না ভোটা বা অনাস্থা উত্থাপনের ক্ষমতা, তাদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ এবং দায়িত্বশীল আচরণে উদ্ধ্দ্ধু করবে।
রাজনীতি বিশ্বের অন্যতম মহৎ জনসেবা। তবে যদি তা নিঃস্বার্থ ও মানুষের কল্যাণের জন্য হয়। আমরা যদি মনে করি শুধু আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে নীতির অভাব রয়েছে, তবে তা ভুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই রাজনীতিবিদ বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজনীতির অঙ্গনকে দুষণমুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসানে আইন ও নীতি প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি হলেই তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া যাবে এ ধরনের মানসিকতার অবসান জরুরি। জনপ্রতিনিধি নাগরিক হিসেবে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। দায়িত্ব পালণ শেষে তিনি আবার একজন নাগরিক।
গণভোট, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা, সমর্থন প্রত্যাহারের বিধান আজ এ প্রস্তাবনাগুলোকে হয়তো কঠিন মনে হবে। কিন্তু এ দিন এ বিষয়গুলো রাজনীতিবিদরা নিয়ে আসবে। আজ যা ভাবব, কেউ এ কথা বলবে, যখন কিছু লোক এ কথা বলবে, অনেক লোক ভাববে, আর কিছু লোক দাবি আদায়ে সংগঠিত হবে। তবেই রাজনীতিবিদরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।