Sunday, July 1, 2012

হাঁটার অধিকার সার্বজনীন মানবাধিকার


ফুটপাত শুধু হেঁঁটে গন্তব্যে যাবার জন্য নয়, এর সঙ্গে নগরবাসীর জীবন-যাত্রার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। ফুটপাতে পথচারীদের বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থা হতে পারে সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি মাধ্যম। মানুষকে হেঁটে চলাচলে উৎসাহী করার জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন যাতে মানুষ নিজ থেকেই হাঁটতে উৎসাহী হয়। গাড়ি ব্যবহারকারীদের অপেক্ষা হেঁটে চলাচলকারীদের উপর রাস্তার পরিবেশ অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। হেঁঁটে এবং গাড়ী ব্যবহারকারী উভয় শ্রেণীর মানুষের জন্যই ফুটপাত ও রাস্তার পরিবেশ উন্নত করা প্রয়োজন। নিরাপদ ও আর্কষণীয় রাস্তা তৈরি করতে হবে যেখানে শিশুরা নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দ্যে হাঁটতে এবং সাইকেলে করে স্কুলে যেতে পারবে। আমাদের এমন একটি শহর তৈরি করতে হবে যাতে মানুষকে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ ও গন্তব্যে পৌঁছতে খুব বেশি দুরে যেতে না হয়। একটি পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনা পথচারীদের নিরাপত্তা সৃষ্টির পাশাপাশি আনন্দ-বিনোদনের জায়গা হয়ে উঠতে পারে। 
যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে হেঁটে চলাচল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুরো যাতায়াত ব্যবস্থায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে যেতে কিছুটা পথ অবশ্যই হাঁটতে হয়। যেমন- পাবলিক পরিবহণ পাওয়ার জন্য স্টেশন পর্যন্ত হাঁটতে হয়। নগরে আমাদের প্রত্যেককেই কম বেশি হাঁটতে হয়। তাছাড়া বর্তমানে ঢাকা শহরে অধিকাংশ যাতায়াত হেঁটে। তাই হাঁটার পরিবেশ উন্নত একটি বৃহৎ অংশের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।

হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:

* অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাঁটার সুবিধা বৃদ্ধিতে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
শহরের সকল এলাকায় হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা।
ফুটওভার ব্রিজ না করে, জ্রেবা ক্রসিং বা সিগন্যাল সিষ্টেম উন্নত করা। পথচারীদের নির্বিঘেœ রাস্তা পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং এর পূর্বে গাড়ি থামানো। যাতে সব মানুষ বিশেষ করে শিশু, নারী, বৃদ্ধ, শারীরিক প্রতিবন্ধী বা অসুস্থ ব্যক্তিরা সহজে রাস্তা পার হতে পারে।
* ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করা এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করা।
* দূর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ হাঁটার পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* সকল এলাকায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রিত রেখে সুশংখলভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করা। দিনের ব্যস্ততম সময়ে কিছু এলাকায় আংশিক গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা। যেমন- হাসপাতাল, স্কুল এবং মার্কেট এলাকা।
* পথচারীদের চলাচলে উৎসাহী ও অপরাধের হাত থেকে নিরাপদ করতে ফুটপাতে সুশৃংখলভাবে ছোট দোকান বা হকারদের বসার ব্যবস্থা করা।
*ফুটপাত কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র এবং ময়লা-আবর্জনামুক্ত রাখা।
*ফুটপাত প্রশস্ত করা ও ছায়ার জন্য পর্যাপ্ত গাছ লাগানো ও সংরক্ষণ এবং আলোর ব্যবস্থা করা।
* পরিবহণ পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষেত্রে ফুটপাতের পাশে জ্বালানিমুক্ত যানবাহন (সাইকেল, রিকশা) চলাচলকে প্রাধান্য দেয়া।
* মাস/সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে কোন কোন এলাকায় আংশিক বা পুরো সময় যান্ত্রিক যান নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র হেঁটে, সাইকেলে ও রিকশায় চলাচলের ব্যবস্থা করা।

নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হোক অধিকাংশ মানুষের সুবিধাকে। ইট, পাথর, বালি, গাড়ী, যানজট, শব্দ ও বায়ূদূষণের পরিবর্তে মানুষের বসবাসের জন্য পরিবেশ বান্ধব নগর গড়ে তোলাই হোক আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আমাদের শিশুরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবে, মানুষে মানুষে থাকবে অটুট বন্ধন, নিশ্চিত হবে সামাজিক সমতা, অগ্রাধিকার পাবে অধিকাংশ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে ও সহজে চলাচলের ব্যবস্থা।
‪#‎ I‬ am pedestrian, safe crossing is my rights.#pedestrian, #Walking