Wednesday, March 18, 2015

বাংলাদেশে পানির অবস্থা

বিশুদ্ধ পানি
মানুষের জীবন পানির সাথে একসূত্রে গাঁথা। এই ভূ-পৃষ্ঠের যেমন ৭০ ভাগই পানিতে ঢাকা, তেমন আমাদের শরীরেরও প্রায় ৭০ ভাগ পানি। শুধু আমাদের জীবনই নয়, পৃথিবীর সব জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, গাছপালা সবকিছুর জীবনই এই পানির ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিন যাবতীয় কাজ, চাষাবাদ, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন সবকিছুর জন্যই আমরা পানি উপর নির্ভরশীল। এক কথায় পানি হলো এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, জীবনের জন্য যার কোন বিকল্প নেই।

বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ পানির জন্য সংগ্রাম করছে। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ শতকে বিশ্বে মিঠা পানির ঘাটতি ২০ভাগ বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছে। বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন একটি বিশাল সমস্যা। গবেষকদের মতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে প্রতিবছর দেশের ৭ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে।

বিশুদ্ধ পানির অভাবে সৃষ্ট সমস্যা ঃ 
ভূ-গর্ভের চার ভাগের তিন ভাগ পানিতে পরিপূর্ণ হলেও মানুষের ব্যবহারের উপযোগী পানি মাত্র এক ভাগ। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুসারে সুপেয় পানির অভাবে ও দূষিত পানি পানের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে সোয়া কোটি মানুষ। সাধারণত খাওয়া, গোসল, রান্নাবান্না ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ৫০ লিটার পানি প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে পৃথিবীতে ১১০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পান করার জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পায় না। 

পানি দূষণের কারণে বাংলাদেশে ডায়ারিয়া ও অন্যান্য পানি বাহিত রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ। এছাড়া অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে গবেষকগণ মতামত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ৮ কোটি মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। গত এক যুগে দেশের ৬১ জেলার ২৭০ উপজেলায় আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানির কারণে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে আর্সেনিকজনিত ক্যান্সারের কারণে ২০০,০০০-২৭০,০০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশংকা করছে। গবেষণায় দেখা যায় দেশের ৩০ ভাগ নলকূপের পানি আর্সেনিক দূষণে দূষিত এবং প্রতিদিন দুষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি কাজ ও চাষাবাদের জন্য পানি একটি বড় বিষয়। বর্তমানে চাষাবাদের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। শহর অঞ্চলেও ধীরে ধীরে পানির সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে দেশের অধিকাংশ বিভাগীয় ও জেলা শহরেরই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।  হ্রাস পাচ্ছে সুপেয় পানির পরিমান। 

বাংলাদেশে পানির উৎসঃ 
পানি সম্পদের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্পদশালী। এর ভূ-পৃষ্ঠে যেমন আছে পদ্মা- মেঘনা- যমুনার মত প্রমত্তা নদী, তেমনি ভূ-গর্ভেও রয়েছে সুপেয় পানি। এদেশের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় প্রায় সাতশ নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল-বিল, দীঘি-পুকুর ও হাওর-বাঁওড়। বর্ষাকালে সারাদেশ পানিতে থৈ থৈ করে। বাংলাদেশে বাৎসরিক গড় বৃষ্টির পরিমান প্রায় ২০৫০ মিলিমিটার। আর বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৮০% ভাগ বৃষ্টি হয়। কিন্তু আমাদের অবহেলা ও অপরিকল্পনার কারণে পানির উৎস আজ হুমকির সম্মুখীন।